এইডসের চেয়েও ভয়ঙ্কর হেপাটাইটিস ভাইরাস - Bangla Health Tips

হেপাটাইটিস বা যকৃতের প্রদাহজনিত রোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিসবি সি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতি বছর নতুন করে আরও আড়াই লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। দেশে রোগে আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়লেও চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ছে না। সারাদেশের চিকিৎসাসেবা মাত্র ৬০ জন চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল।



চিকিৎসকদের মতে, হেপাটাইটিসবি ভাইরাস এইচআইভি এইডসের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। বিশ্বব্যাপী এইডসের তুলনায় হেপাটাইটিসবি সি ভাইরাসজনিত লিভারের অসুখে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। লিভার সিরোসিস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিসসি ভাইরাস। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অপরীক্ষিত রক্তগ্রহণ অসচেতনতার কারণে হেপাটাইটিস বা যকৃৎ প্রদাহে আক্রান্তের হার বাড়ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে হেপাটাইটিস ভাইরাসের ধরনগুলোকে, ‘বি, ‘সি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যেবি সি ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেশি। বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের তথ্য মতে, বিশ্বে প্রায় পঞ্চাশ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসবি সি ভাইরাসে আক্রান্ত। হার প্রতি ১২ জনে একজন। অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছেহেপাটাইটিস প্রতিরোধ করুন, এটা আপনার হাতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসবি ভাইরাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে এক কোটি বাংলাদেশে। হেপাটাইটিসসি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ মানুষসি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতি বছর পৃথিবীতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। ব্লাড ট্রান্সফিউশনের আগে তা হেপাটাইটিসসি ভাইরাসমুক্ত কি-না পরীক্ষার কারণে উন্নত বিশ্বে এর সংক্রমণ দিন দিন কমছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে চলছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে থেকে ১২ শতাংশ লিভারের (যকৃৎ) রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে বেশিরভাগই হেপাটাইটিসবি সি ভাইরাসে আক্রান্ত। দুই ভাইরাসজনিত লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রতি বছর ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। চলতি বছর প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী মৃত্যুর অবস্থানের দিক থেকে লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু তিন নম্বরে রয়েছে। ফুসফুস বা পাকস্থলীর ক্যান্সারের পর দেশে লিভার রোগে আক্রান্তদের অবস্থানও তিন নম্বরে আছে। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি হেপাটাইটিসবি সি ভাইরাসে আক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল) সমকালকে বলেন, হেপাটাইটিসবি সি ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না।সি ভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকই ১০-১৫ বছরের মধ্যে লিভার সিরোসিস লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।সি ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা নিরাময় করা সম্ভব।বি ভাইরাসে আক্রান্তরা মাঝে মাঝে পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে ব্যথা অনুভব করেন। ছাড়া দুর্বলতা ক্ষুদামন্দাও হয়ে থাকে। ভ্যাকসিনেশন হেপাটাইটিসবি ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর।বি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের সন্তানও আক্রান্ত হতে পারে। তাই ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। 

চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা :সরকারি পর্যায়ে হেপাটাইটিস আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সংকট চলছে। সারাদেশে মাত্র দুজন অধ্যাপকসহ ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। রাজধানীর মহাখালীতে পৃথক লিভার ইনস্টিটিউট করার কথা থাকলেও আজও তা হয়নি। বেশিরভাগ হাসপাতালেই মেডিসিন গ্যাস্ট্রো অ্যান্টারোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার অব বাংলাদেশের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান বলেন, হেপাটাইটিস আক্রান্তের হার বিবেচনা করে সরকারকে চিকিৎসাসেবা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক সমকালকে বলেন, মহাখালীতে সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজ চলছে। ওই জমি দখলমুক্ত করে লিভার ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে স্বতন্ত্র ইউনিট চালুর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments