একটু ব্যথা হলে অনেকেই পেইন কিলার বা ব্যথানাশক বড়ি খেয়ে বসেন। কিন্তু ব্যথা নিরাময়ে বেশ কিছু প্রাকৃতিক ওষুধ আছে, যা আপনার রান্নাঘরেই পেয়ে যাবেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এতে একদিকে যেমন ব্যথা সেরে যায়, তেমনি স্বাস্থ্য থাকে ভালো। জেনে নিন হাতের নাগালে থাকা এসব ব্যথানাশক সম্পর্কে:
চেরি:
প্রাকৃতিক ব্যথানাশক চেরি। এতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, এটাকে অ্যান্থোসায়ানিন বলে। এই উপাদান প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে এবং ব্যথা উপশম করে। তাই যাঁদের ব্যথার সমস্যা মনে হয়, কয়েকটি চেরি খেয়ে নিতে পারেন। আকারে ছোট হলেও এই ফলের রয়েছে ঔষধি গুণ। চেরিতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ, যা সংক্রামক, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। চেরি টিউমারকে বাড়তে দেয় না এবং শরীরের উপকারী সেলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। চেরি ফলের আছে প্রদাহবিরুদ্ধ গুণাবলি। এর ফলে চেরি খেলে আপনার বাতের ব্যথায়ও উপকার পাবেন।
হলুদ:
হলুদের গুণের কথা কে না জানে! অনেক দিন ধরেই প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে হলুদ। এতে আছে কুরকুমিন নামের উপাদান। এতে যে প্রদাহবিরোধী উপাদান আছে, যা অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। অস্থিসন্ধির ব্যথা বা পেশির ব্যথা উপশম করতে পারে হলুদ। কাঁচা হলুদই হোক আর গুঁড়া হলুদ, দুটোরই আছে গুণ। হলুদ হজমের জন্য খুব উপকারী। খাদ্য হজম হতে যেসব পরিপোষক দরকার, সেগুলো হলুদে নির্দিষ্ট পরিমাণে রয়েছে। পেটের নানা রকম পীড়ায় যাঁরা ভুগছেন (যেমন: অম্লের ব্যথা, অজীর্ণতা ইত্যাদি), তাঁরা রোজ সকালে খালি পেটে অল্প একটু কাঁচা হলুদের রস বা পাতলা করে কাটা হলুদের ছোট টুকরা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ত্বকের জন্যও এটি খুব ভালো। ত্বকে নিয়মিত হলুদের ব্যবহার চেহারায় দ্যুতি আনে। হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। দুধের সঙ্গে অল্প হলুদের রস মিশিয়ে পান করা শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্যই ভালো।
আদা:
পানীয় থেকে শুরু করে রান্নার নানা পদে ব্যবহার হয় আদা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাবারে আদা ব্যবহার করলে স্বাদ-গন্ধ যেমন বাড়ে, একই সঙ্গে খাদ্যের পুষ্টিমানও বেড়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে আদা প্রাচীনকাল থেকে জনপ্রিয়। খাওয়ার পরে হজমে সমস্যা হলে আদা বা আদা চা খেতে পারেন। শ্বাসকষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করার অসাধারণ এক ক্ষমতা আছে আদায়। বুকে কফ জমে বা ঠান্ডা লেগে যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়, তাদের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ হলো আদা। রক্ত সঞ্চালনের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে এই মসলা। এর উপাদানগুলো পেশির কাজে গতি আনে। আবার ব্যথা প্রশমনেও কার্যকর। একই সঙ্গে হাড়ের সংযোগস্থলগুলোর ব্যথাও দূর করতে পারে। অনেক কারণে মানসিক চাপ ও অস্থিরতায় ভুগে থাকি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদায় থাকা কিছু উপাদান মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। মাসিকের সময় অনেকেরই তলপেট ব্যথা ও শারীরিক অস্বস্তি দেখা দিতে পারে, এ ধরনের সমস্যা এড়াতেও আদা খেয়ে দেখতে পারেন।
লাল আঙুর:
ব্যথানাশক হিসেবে যদিও আঙুর খুব বেশি প্রচলিত নয়। এতে রেসভেরাট্রল নামের একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ থাকে। এর প্রভাবেই আঙুর লাল রঙের হয়। কোমরব্যথা বা অস্থিসন্ধির ব্যথা সারাতে এই উপাদান কাজে লাগে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে ছোট ছোট বিষয় দ্রুত ভুলে যান। আবার কোনো ঘটনা বেমালুম স্মৃতি থেকে মুছে যায়। এটা কিন্তু একধরনের রোগ, হেলাফেলার কিছু নয়। এই রোগ এড়াতে খেতে পারেন আঙুর। হঠাৎ করে মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেল। এ সময় আঙুর খেলে আরাম বোধ হবে। দাওয়াত খেয়ে এসে অস্বস্তি লাগলে খেতে পারেন আঙুর। হজমের জন্য যেমন ভালো, পেটের পীড়ার জন্যও উপকারী। চোখ ভালো রাখতে কার্যকর এই ফল। আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ পদার্থ ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙুরের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের সহায়ক ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে।
লবণ:
শরীরে যদি ধকলজনিত বেশি ব্যথা বোধ হয়, তবে গোসলের পানিতে ১০ থেকে ১৫ টেবিল চামচ (এক কাপ) লবণ মিশাতে পারেন। ওই পানিতে ১৫ মিনিট ভিজুন। ওই স্যালাইন দ্রবণ শরীরের কোষগুলোকে আর্দ্র করে প্রদাহ ঠেকাবে বা ব্যথা সারাবে।
সয়াবিন:
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সয় প্রোটিন আরথ্রাইটিসের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এ ছাড়া অস্টিওআরথ্রাইটিসের উপসর্গও দূর করতে পারে এই প্রোটিন। এতে ইসোফ্লেভনস নামে প্রদাহনাশক উপাদান আছে।
দই:
পেটের ব্যথা, প্রদাহ ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দূর করতে পারে দই। দইয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের নানা রকম ব্যথা উপশম করে। নিয়মিত দই খাওয়া হলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এ ছাড়া দই দেহের রক্তের শ্বেতকণিকা বাড়িয়ে দেয়, যা জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। প্রতিদিন এক বাটি দই খেতে হবে।
লাল মরিচ:
লাল মরিচে থাকে ক্যাপসিসিন নামের বিশেষ উপাদান। এই উপাদানটি অনেক প্রদাহনাশক ক্রিমেও থাকে। এতে স্নায়ুর প্রান্তগুলো শান্ত থাকে এবং এর রাসায়নিক ব্যথা দূর করে। স্যুপ বা রান্নায় আধা চা চামপ লাল মরিচ নিতে পারেন।
কফি:
কফিতে থাকে ক্যাফেইন। মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা ব্যথার সংবেদনশীলতা কমাতে পারে ক্যাফেইন। কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে।
তথ্যসূত্র: টিএনএন।
0 Comments