প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। গরমের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতেরও বেহাল দশা। তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠা-নামা করছে। দেখা নেই বৃষ্টির। অনেকেই এ সময় হিটস্ট্রোকসহ নানা শারীরিক সমস্যায় পড়ছেন। এই গরমে সুস্থ থাকতে যথেষ্ট সতর্ক হওয়া জরুরি। বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে অতি সাবধানতা অবলম্বন না করলে বিপদ হতে পারে।
শুরুতেই বলা ভালো- এই গরমে তৈলাক্ত খাবার, পোলাও-বিরিয়ানী এড়িয়ে চলাই মঙ্গল। এসময় খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার যোগ এবং কিছু বাদ দিয়ে অনেকটা স্বস্তি পেতে পারেন। তেলে ভাজা ও বাইরে খাবার বাদ দিয়ে সবজি ও ফল বেশি করে খেলে শরীর ভিতর থেকেই ঠান্ডা থাকবে। দেখে নিনি কোন কোন খাবার শরীর বেশি ঠান্ডা রাখবে-
তরমুজ: তরমুজ গরমে সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদস্বরূপ। অনেকে মনে করেন তরমুজ খেলে পেট গরম হয়। এটা ভুল ধারণা। তরমুজ শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। তাই গরমে অবশ্যই খেতে হবে তরমুজ। গরমের সময় মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। ফলে ডিহাইড্রেশনের আশংকা বাড়ে। তরমুজ এই পানির ঘাটতি দূর করে। এটি ভিটামিন এ, লাইকোপিন, বেটাক্যারোটিন প্রভৃতি উপকারী উপাদানে সমৃদ্ধ। এছাড়া পটাশিয়াম, সোডিয়ামসহ কার্যকরী খনিজ উপাদান পাওয়া যাবে।
আনারস: গরমের সময় আমাদের অনেকেরই সর্দিকাশিসহ ভাইরাল জ্বর হয়ে থাকে। আনারস এগুলোকে দূরে রাখে। শরীর সুস্থ রাখতে গরমে বেশি করে আনারস খেতে পারেন। ভিটামিন সি সহ দেহের জন্য উপকারী অনেক উপাদানই পাবেন আনারসে।
লাউ: গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে লাউ খান। লাউয়ের চেয়ে শরীর বেশি ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার খুব একটা নাই। লাউ সোডিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। পানির পরিমাণ বেশি থাকায় শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং হজমে সহায়তা করে। এছাড়া প্রসাবের জ্বালা-পোড়া কমায়, গ্যস্ট্রিক-আলসারের সমস্যা সমাধানে ভাল কাজ করে এবং ওজন কমাতে কার্যকর।
করলা: করলা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। কারণ, করলা ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ও পলিপেপ্টাইড-পি (এক ধরনের উদ্ভিজ ইনসুলিন যা রক্তে চিনির পরিমান কমায়) সমৃদ্ধ যা উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক জটিল রোগে কার্যকর ওষুধ। এছাড়া গরমে করলা খুব উপকারী।
ডাবের পানি: এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইটস, যা শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এনার্জি বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই গরমে স্বস্তি পেতে নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন।
শসা: পানি এবং ফাইবার থাকার কারণে গরমকে হারাতে সহায়ক শসা। এটি খেলে শরীর ঠান্ডা তো হয়ই, সেই সঙ্গে ক্লান্তিও দূর হয়।
দই: গরমকালে খুবই উপকারী খাবার হচ্ছে টক দই। কারণ এতে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা শরীরকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পেঁপে: গরমে পেঁপে খুব উপকারী। কেননা এতে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি (৩৯ ক্যালরি / ১০০ গ্রাম) থাকে এবং কোন কোলস্টরেল থাকে না এবং ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস খনিজ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। আর তাই গরমে পেঁপে কাঁচা ও পাকা দু’ভাবেই খেতে পারেন।
বেল: বেল এই গরমে আপনার স্বস্তির কারণ হতে পারে। গরমে বেলের শরবত বেশি করে খান।
পুদিনা পাতা: শরীর ঠান্ডা রাখতে পুদিনা পাতা কার্যকরী। খাবারের সঙ্গে পুদিনা পাতা খেলে শরীর ভালো থাকে।
লেবু-পানি: তৃষ্ণা মেটাতে কোল্ড ড্রিংক না খেয়ে লেবু-পানি পান শুরু করুন। গরমের সময় শরীরকে সতেজ রাখতে এটি খুবই সহায়ক।
সবুজ শাকসবজি: এই ধরনের খাবারে ফাইবার এবং পানির মাত্রা খুব বেশি পরিমাণে থাকে। তাই প্রত্যেকবার খাবারের সঙ্গে অল্প করে সবজি খেলে শরীরে পানির মাত্রা কমে যাওয়ার আশংকা কমে। সেই সঙ্গে শরীরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
বাঙ্গি: অনেকে এই ফলটি খেতে পছন্দ করলেও বেশিরভাগ মানুষ বাঙ্গি খেতে চায় না। অথচ বাঙ্গি দীর্ঘ সময় ধরে শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য খুবই কার্যকর। ভিটামিন, খনিজ (পটাসিয়াম, সোডিয়াম) এর উৎকৃষ্ট উৎস হল বাঙ্গি।
0 Comments