চলতে ফিরতে গেলে ব্যথা লাগবেই! বিশেষত বাচ্চাদের তো এই হাতে লাগে, তো সেই পায়ে। আর এমনটা হলেই আমরা সাধারণত পেইনকিলার বা ব্যাথা নাশক ওষুধের দ্বারস্থ হই। নিজেরাও মনের খুশিতে খাই, সেই সঙ্গে বাচ্চাদেরও খাওয়াই। একবার ভেবেও দেখি না এই সব ব্যাথানাশক ওষুধ আসলে শরীরের পক্ষে ভাল কিনা।
প্রসঙ্গত, পেইনকিলার বা ব্যাথানাশক ওষুধ আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কে নানা বিরুপ প্রভাব ফেলে। একাধিক গবেষণাপত্র অনুসারে নিয়মিত পেইনকিলার সেবন করলে ফুসফুস, পাকস্থলি, অন্ত্র, লিভার, মাংসপেশি, কিডনি সহ শরীরের একাধিক অঙ্গ তাদের কর্মক্ষমতা হারাতে শুরু করে। ফলে দেখা দেয় নানা জটিল রোগ। তাই এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, যন্ত্রণা কমাতে গিয়ে জটিল কোনো রোগ আক্রান্ত হয়ে পড়তে চান কি? আপনার উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে একবার চোখ রাখুন এই লেখায়।
এই লেখায় এমন কিছু ঘরোয়া পেইনকিলারের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হল, যেগুলি রান্না ঘরে সব সময় উপস্থিত থাকে। আর এইসব ঘরোয়া ওষুধের কোনও সাইড এফেক্ট না থাকায় শরীরের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।
১. টার্ট চেরি
যন্ত্রণা কমাতে এই ফলটি দারুণ কাজে আসে। এতে অ্যান্থোসায়ানিস নামে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে প্রদাহ কমায়। ফলে এই ফলটি খেলে ব্যথা কমতে শুরু করে।
২. হলুদ
ব্যথা কমাতে এই মশলাটির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। কারণ কি জানেন? হলুদে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লমেটরি উপাদান, যা যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি ফোলা ভাব কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রসঙ্গত, বাজার চলতি একাধিক জনপ্রিয় পেইনকিলার থেকে কোনও অংশে কম কাজে আসে না এই ঘরোয়া ওষুধটি। তাই এবার থেকে শরীরের কোথাও চোট-আঘাত লাগলে এক গ্লাস দুধে হলুদ মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন আনেক আরাম পাবেন।
৩. আদা
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় যন্ত্রণা কমাতে আদা দারুণ কাজে দেয়। বিশেষত, আর্থ্রারাইটিস, পাকস্থলির যন্ত্রণা, চেস্ট পেন, পিরিয়ডের যন্ত্রণা এবং মাংসপেশির ব্যথা কমাতে আদার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। যে জায়গায় যন্ত্রণা হচ্ছে সেখানে অল্প করে আদা বেটে লাগিয়ে দিন অথবা আদা চা খেলেই হাতেনাতে ফল পাবেন।
৪. লাল আঙুর
সেভাবে জনপ্রিয়তা না পেলেও যে কোনও ধরনের ব্যথা কমাতে এই ফলটি দারুণ কাজে লাগে। কারণ লাল আঙুরে রয়েছে রেভারেট্রল নামে একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কম্পাউন্ড, যা কার্টিলজকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি জয়েন্ট পেইন এবং পিঠের ব্যাথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. পুদিনা পাতা
মাংসপেশিতে যন্ত্রণা হচ্ছে বা দাঁতের যন্ত্রণায় মাঝে মাঝেই কাবু হয়ে পড়েন? চিন্তা নেই এবার থেকে এমনটা হলেই এক মুঠো পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেয়ে নিন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে। প্রসঙ্গত, মাথা যন্ত্রণা, স্নায়ুর ব্যাথা এবং এমনকী পেটের নানা গোলযোগ সারাতেও এটি দারুণ কাজে দেয়।
৬. লবণ
গোসল করার সময় ১০-১৫ চামচ লবণ পানিতে মিশিয়ে দিন। তরপর সেই পানিতে কম করে ১৫ মিনিট শুয়ে থাকুন। এমনটা করলে দেখবেন প্রদাহ বা যন্ত্রণা কমতে শুরু করবে। লবণ দেহকোষকে তরতাজা করে তোলে। ফলে যন্ত্রণার প্রকোপ কমে যায়।
৭. সোয়াবিন
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে অার্থ্রাইটিস, বিশেষত অস্টিওআর্থ্রারাইটিসের যন্ত্রণা কমাতে সোয়া প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সোয়াতে ইসোফ্লেবোনস নামে একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা প্রদাহ কমায়। তাই আপনি যদি আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন সোয়া মিল্ক।
৮. দই
এতে রয়েছে বেশ কিছু উপকারি ব্যাকটেরিয়া, যা যন্ত্রণা কমায়। বিশেষত তলপেটের যন্ত্রণা কমাতে এইসব ব্যাকটেরিয়াগুলি দারুণ কাজে দেয়।
৯. ঝাল মরিচ
খাবারে অর্ধেক চামচ ঝাল মরিচ মিশিয়ে সেই খাবার খেয়ে ফেলুন। অল্প সময়ের মধ্যেই যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমে যাবে। আসলে মরিচে কেপসাইসিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা ব্যথা কমায়।
১০. কফি
কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন নামে একটি উপাদান। এটি যন্ত্রণার প্রকোপ কমায়। এমনকী মাথার যন্ত্রণা কমাতেও দারুণ কাজে আসে ক্যাফেইন। তবে এ প্রসঙ্গে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, বেশি মাত্রায় কফি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন প্রবেশ করলে অন্য ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই দিনে এক কাপের বেশি কফি খাওয়া উচিৎ নয়।
সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া
0 Comments